প্রাচীন বাংলার রাজনৈতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস
প্রাচীন বাংলার রাজনৈতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার উৎসমূহ
প্রাচীন যুগে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস
প্রাচীন কালে পুরো বাংলা জুড়ে একক কোনো রাষ্ট্র গড়ে উঠে নি। অর্থাৎ বাংলাদেশ বলতে একক কোনো জনবসতির নামাঞ্চল তখন ছিল না। তাই বাংলা বা বাংলাদেশ নামে এখন যে এলাকা বা অঞ্চলটিকে বুঝায়, তেমন কোনো স্বাধীন বা সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তখন ছিল না। সে অঞ্চলে তখন অখণ্ড কোনো রাজ্যও ছিল না। প্রাচীন কালে তাই আজকের বাংলাদেশ অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রতিটি অঞ্চলের শাসক যার যার মত শাসন করতেন, তাই অঞ্চলগুলো ছিল ছোট ছোট স্বাধীন দেশের মত। তখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত স্বাধীন দেশের মত এসব বিভিন্ন রাজ্যাঞ্চলগুলো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় জনপদ বা আজকের শব্দার্থে রাষ্ট্র নামে অভিহিত করা হতো। কিন্তু এগুলোকে ঠিক রাজ্য বা রাষ্ট্র বলা যাবে না। বাংলার এ অঞ্চলগুলোর তখন নাম দেয়া হয় জনপদ।
⇒Follow us On Google News For Latest Updates ⇐
ভারতবর্ষে আর্য জাতি প্রবেশ করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর আগে। তারা ভারতে এক উন্নত সভ্যতা গড়ে তোলে। ভারতে আগমনের অনেক কাল পরে আর্যরা বাংলায় প্রবেশ করে। এভাবেই এদেশে শুরু হয় আর্য যুগ। আর্যদের আগমনের পূর্বে এদেশের মানুষের জীবনধারা কেমন ছিল সে সম্পর্কে জানার মত খুব বেশি তথ্য আমাদের হাতে নেই। বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ছাড়া বাদবাকি অঞ্চলের মাটি বেশ প্রাচীন। এখানে প্রাগৈতিহাসিক কালপর্ব থেকেই জনমানুষের বসতি ছিল। বাংলার প্রাচীন জনপদ তথা সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেছে, বর্তমান ভারতের পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার অজয় নদীর তীরে। এখানে 'পাণ্ডু রাজার ঢিবি' বলে পরিচিত একটি অঞ্চল রয়েছে।
প্রাচীন যুগে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস
প্রাচীন বাংলার মানুষের প্রধান খাবার ছিল ভাত, মাছ, গোশত, শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, দই, ঘি, ক্ষীর প্রভৃতি। ইলিশ মাছ প্রাচীন বাংলার মানুষের প্রিয় খাবার ছিল। পূর্ব বাংলার মানুষ শুঁটকি মাছ খেতে পছন্দ করতো। উৎসব অনুষ্ঠানে নানারকম খাবারের ব্যবস্থা থাকতো। নানা রকম পিঠাও এ সময় তৈরি করা হতো। কর্পূর মিশিয়ে সুঘ্রাণযুক্ত পানি পান করা হতো। মসলাযুক্ত পান খাওয়ার প্রচলন ছিল প্রাচীনকালে। প্রাচীন বাংলা সমাজে পুরুষের প্রধান পোশাক ছিল ধুতি।
মেয়েরা পরতো শাড়ি। তবে শাড়ি পরার ধরন ছিল আলাদা। বিত্তশালী পরিবারের মেয়েরা উত্তরীয় বা ওড়না ব্যবহার করতো। উৎসব অনুষ্ঠানে বিভিন্নরকম পোশাক পরিধান করতো। নারী-পুরুষ উভয়েই অলংকার ব্যবহার করতো। মেয়েরা হার, কঙ্কন, বলয়, কুন্তল, অঙ্গুরি মল প্রভৃতি ব্যবহার করতো। মেয়েরা সিঁদুর ছাড়াও বিভিন্ন সুগন্ধি দ্বারা দেহের সৌন্দর্য ও সৌরভ বৃদ্ধি করতো।
প্রাচীনকালে বাংলার সমাজে বিভিন্ন রকম খেলাধুলা ও আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করতো। পাশা ও দাবা খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল। নাচ, গান এবং অভিনয়ও বিদ্যমান ছিল। বায়ান, লাঠিখেলা এবং মল্লযুদ্ধে পুরুষেরা অংশগ্রহণ করতো। বিভিন্ন রকম পূজা পার্বন প্রচলিত ছিল। নবান্ন উৎসব, বিশ্বকর্মা পূজা, শীতলা, মনসা, বন, দুর্গা, চণ্ডী, সঙ্গী, কালি, শিব, পূজা, ধর্ম ঠাকুরের পূজা, চড়ক পূজা, রথযাত্রা, অষ্টমীস্নান, শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান সেকালের সমাজে প্রচলিত দিল। প্রাচীনকালে মানুষের যানবাহনের প্রধান অংশ ছিল গরুর গাছি, নৌকা, ভেলা ও ভাঙা। কৃষিপ্রধান বাংলার অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করতো। এ সমাজে মত তখনও সমাজে ধনী এবং গরিব শ্রেণির সন্ধান পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণদের হাতে সমাজের মূল চাবিকাঠি ছিল। সেন রাজাদের শেষভাগে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
সেনদের শাসনামলে বৌদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতির উপর নেমে আসে ব্যাপক দুর্ভোগ ও দুর্দশা। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রভাবে সেনযুগে সাধারণ হিন্দু সমাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। প্রাচীন বাংলার শেষযুগে বিশৃঙ্খলা অবস্থায় মুসলিম শাসনের ভিত চোরা সৃষ্টি হয়। তবে প্রাচীন কালে সমাজ-সংস্কৃতির রূপ বার বার পরিবর্তিত হয়েছে।