শেখ মুজিবের পররাষ্ট্রনীতির সফলতা আলোচনা
বঙ্গবন্ধুর বৈদেশিক নীতির ইতিবাচক দিকসমূহ উল্লেখ কর
ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়” এই নীতির আলোকে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, আমি বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বানাতে চাই। এসব নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমতার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে পক্ষাবলম্বনকারী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হন।শেখ মুজিবের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য : অভ্যন্তরীণ নীতির সম্প্রসারিত নীতিই পররাষ্ট্রনীতি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে অল্প সময়ের মধ্যেই শেখ মুজিব সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। নিচে শেখ মুজিবের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যসমূহ আলোচনা করা হলো
১। স্বীকৃতি : মুক্তিযুদ্ধকালেই বিভিন্ন দেশের কাছে মুজিবনগর সরকার স্বীকৃতির আহ্বান জানায়। এ সময় ভারত ও ভুটান বাংলাদেশ স্বীকৃতি প্রধান করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। এ বছরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বিশ্বের ৯৮টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৭, যা বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় সাফল্য ।
২। ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার : মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনী একসাথে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রায় ১ লক্ষ সৈন্য এ সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে সকল ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করা হবে। এ প্রতিশ্রুতির ১২ দিন আগেই ১২ মার্চ সকল ভারতীয় সৈন্য ফিরে যায়। এত অল্প সময়ে কোনো দেশে স্বাধীনতার পর সহায়ক বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার করা হয় নি, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বড় সাফল্য।
৩। শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনীর অত্যাচার, গণহত্যার শিকার হয়ে প্রায় এক কোটি বাঙালি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৯ ডিসেম্বর শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ৯৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে।
৪। উপমহাদেশে শাস্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : স্বাধীনতার পর পাক যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি, পাকিস্তানের আটক বাঙালিদের দেশে প্রত্যাবর্তন, বাংলাদেশে আটকে পড়া অবাঙালিদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পিছনে বড় বাধা ছিল। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানে আটক সকল বাঙালি ও ভারতে আটক যুদ্ধবন্দিরা তাদের স্ব-স্ব দেশে ফিরে যায়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ জন অবাঙালি পাকিস্তান ফেরত নেয়। এতে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর এ কূটনীতি বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
৫। জাতিসংঘের সহায়তা : বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিলিফ কার্যক্রম চলে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। জাতিসংঘের রিলিফ কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে পরিচালিত ক্ষয়ক্ষতি জরিপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের বিষয় স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১২,৪৯,৩১৯ মিলিয়ন ডলার (১২৯৪ কোটি টাকা)। ১৯৭২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের আওতায় পাওয়া রিলিফের পরিমাণ ছিল ৯৯.৪ মিলিয়ন ডলার। যদিও চাহিদার তুলনায় রিলিফের পরিমাণ অপ্রতুল ছিল, তবুও বঙ্গবন্ধুর অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই এ রিলিফ পাওয়া সম্ভব হয়।
৬। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর : উপমহাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ড. কূর্টওয়ার্ল্ডহেইম বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের পরপরই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের পথ সহজ হয়। এটিও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় সাফল্য।
৭। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ : ১৯৭২ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করে। অতঃপর ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ দীর্ঘ প্রতিক্ষিত জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। একই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করে।
৮। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার প্রথম থেকেই তৎপর হয়। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি মিশরভিত্তিক আফ্রো-এশিয়া সংহতি পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। একই মাসের শেষদিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সঙ্গেও বাংলাদেশের চুক্তি হয়। ১৯৭২ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ILO, IMF, WHO, IBRD, FAD প্রভৃতি সংস্থার সদস্য হয়। ১৮ এপ্রিল ১৯৭২ বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্য হয়।
৯। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীরা জোট নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালের ৫-৯ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগ দেন। ৮ সেপ্টেম্বর দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানান। এ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভে তাদের সহযোগিতা চান এবং প্রতিশ্রুতিও পান।
১০। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক : বাংলাদেশের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশ, দক্ষিণ এশিয়া দূরপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থে প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি সফল হয়।
উপসংহার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে সফল পররাষ্ট্রনীতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আলোর দিশা পায় এবং সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ অগ্রযাত্রা বেশিদিন চলতে পারে নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে।
১। স্বীকৃতি : মুক্তিযুদ্ধকালেই বিভিন্ন দেশের কাছে মুজিবনগর সরকার স্বীকৃতির আহ্বান জানায়। এ সময় ভারত ও ভুটান বাংলাদেশ স্বীকৃতি প্রধান করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। এ বছরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বিশ্বের ৯৮টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৭, যা বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় সাফল্য ।
২। ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার : মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনী একসাথে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ভারতীয় মিত্র বাহিনীর প্রায় ১ লক্ষ সৈন্য এ সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ১৯৭২ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে সকল ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করা হবে। এ প্রতিশ্রুতির ১২ দিন আগেই ১২ মার্চ সকল ভারতীয় সৈন্য ফিরে যায়। এত অল্প সময়ে কোনো দেশে স্বাধীনতার পর সহায়ক বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার করা হয় নি, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বড় সাফল্য।
৩। শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনীর অত্যাচার, গণহত্যার শিকার হয়ে প্রায় এক কোটি বাঙালি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৯ ডিসেম্বর শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ৯৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে।
৪। উপমহাদেশে শাস্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ : স্বাধীনতার পর পাক যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি, পাকিস্তানের আটক বাঙালিদের দেশে প্রত্যাবর্তন, বাংলাদেশে আটকে পড়া অবাঙালিদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পিছনে বড় বাধা ছিল। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানে আটক সকল বাঙালি ও ভারতে আটক যুদ্ধবন্দিরা তাদের স্ব-স্ব দেশে ফিরে যায়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ জন অবাঙালি পাকিস্তান ফেরত নেয়। এতে উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর এ কূটনীতি বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
৫। জাতিসংঘের সহায়তা : বাংলাদেশে জাতিসংঘের রিলিফ কার্যক্রম চলে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত। জাতিসংঘের রিলিফ কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশে পরিচালিত ক্ষয়ক্ষতি জরিপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের বিষয় স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১২,৪৯,৩১৯ মিলিয়ন ডলার (১২৯৪ কোটি টাকা)। ১৯৭২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের আওতায় পাওয়া রিলিফের পরিমাণ ছিল ৯৯.৪ মিলিয়ন ডলার। যদিও চাহিদার তুলনায় রিলিফের পরিমাণ অপ্রতুল ছিল, তবুও বঙ্গবন্ধুর অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই এ রিলিফ পাওয়া সম্ভব হয়।
৬। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর : উপমহাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মহাসচিব ড. কূর্টওয়ার্ল্ডহেইম বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের পরপরই ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের পথ সহজ হয়। এটিও বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় সাফল্য।
৭। জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ : ১৯৭২ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষকের মর্যাদা লাভ করে। অতঃপর ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ দীর্ঘ প্রতিক্ষিত জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। একই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করে।
৮। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার প্রথম থেকেই তৎপর হয়। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি মিশরভিত্তিক আফ্রো-এশিয়া সংহতি পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। একই মাসের শেষদিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সঙ্গেও বাংলাদেশের চুক্তি হয়। ১৯৭২ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ILO, IMF, WHO, IBRD, FAD প্রভৃতি সংস্থার সদস্য হয়। ১৮ এপ্রিল ১৯৭২ বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্য হয়।
৯। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশ : বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীরা জোট নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালের ৫-৯ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যোগ দেন। ৮ সেপ্টেম্বর দেয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানান। এ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভে তাদের সহযোগিতা চান এবং প্রতিশ্রুতিও পান।
১০। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক : বাংলাদেশের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশ, দক্ষিণ এশিয়া দূরপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থে প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি সফল হয়।
উপসংহার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে সফল পররাষ্ট্রনীতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আলোর দিশা পায় এবং সামনের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ অগ্রযাত্রা বেশিদিন চলতে পারে নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে।