অণুবীক্ষণ যন্ত্র - সরল ও যৌগিক

অণুবীক্ষণ যন্ত্র - সরল ও যৌগিক

যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র

কোনো অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে বীক্ষণ পদ্ধতি জটিল বিধায় এর এই ধরনের নামকরণ। ১৬৬৫ সালে রবার্ট হুক এই জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এটি একটি আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দুই লেন্স-এর সমন্বয়ে গঠিত। এর একটি আই পিস অপরটি অবজেকটিভ লেগ। এটি প্রধানত দুই প্রকার-

(১) মনোকুলার যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও
(২) বাইনোকুলার যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র।

যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের গঠন

যান্ত্রিক অংশসমূহ

নল : নলের দৈর্ঘ্য অবজেকটিভ ও আইপিসের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।

টানা নল (Draw tube) : এটি দেহনলের তুলনায় সরু এবং দেহনলের ভিতরে উপরের অংশে সাথে সংযোজিত অবস্থায় থাকে যার সাহায্যে নলের দৈর্ঘ্য সমন্বয় করা হয়। এর মাথায় ছোট খণ্ডের সাথে লেন্স বসানো থাকে।

দেহনল (Body tube) : এটি লম্বা নল যা সন্নিবেশক ক্রূর সাহায্যে উপরে-নিচে উঠা-নামা করা যায়। এটি টানা নলের চেয়ে মোটা। বক্র বাহুর মাথার সম্মুখ দিকে স্থুল সন্নিবেশক স্ক্রুর সাহায্যে আটকানো থাকে, এটি স্তম্ভের উপরে বাঁকানো অংশ। এর যে অংশের সাথে মঞ্চ (stage) আটকানো থাকে, সেই স্থানের কাছাকাছিতে ইহা হিঞ্জ জয়েন্টের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

পিস : দেহ নলের গোড়ার গোলাকার ঘূর্ণনশীল অংশই Nose piece । এতে তিনটি প্যাঁচকাটা ছিদ্র থাকে যাতে ভিন্ন ভিন্ন বির্ধন ক্ষমতার Objective থাকে ।

ডায়াফ্রাম : এটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে আলো নিয়ন্ত্রণকারী অংশ যা stage-এর নিচে অবস্থিত। একে সংকুচিত বা প্রসারিত আলোক নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সন্নিবেশক ক্রু : বাহুর মাথার দুই পার্শ্বে অবস্থিত খাঁজকাটা স্ক্রু থাকে যাকে ঘুরিয়ে দেহনল উঠা-নামা করিয়ে Objective-কে সঠিক অবস্থানে রাখা যায়। এটি আকারে বড়। তাই একে স্কুল সন্নিবেশক ক্রু বলা হয়।

সূক্ষ্ম সন্নিবেশক স্ক্রু : স্থল সন্নিবেশক ক্রুর নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র খাঁজকাটা স্কুই সূক্ষ্ম সন্নিবেশক স্ক্রু। এই স্কু দুটিকে সন্নিবেশক স্ক্রু বলার কারণ হচ্ছে এইগুলোকে ঘুরিয়ে দেহনলকে উঠা-নামা করিয়ে অভিলক্ষকে সঠিক স্থানে নিয়ে আসা যায়।

মঞ্চ (Stage) : এটি একটি বড় বৃত্তাকার ছিদ্রযুক্ত বর্গাকার গঠন যা বাহুর নিম্নাংশের সাথে যুক্ত থাকে। মঞ্চের উভয় দিকে দুটি ক্লিপ থাকে। ইহা পাদদেশের উপরিস্থিত উল্লম্ব অংশ যা উদ্ভিদের কাণ্ডের ন্যায় সমগ্র অংশকে ধারণ করে। পাদদেশ বেশিরভাগ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এটি অশ্বক্ষুরাকৃতি চ্যাপ্টা পা সদৃশ ধাতব অংশ যার উপর অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সমগ্র অংশ দাঁড়ানো থাকে।


অপটিক্যাল অংশ : এটি দৃষ্টি সংক্রান্ত অংশ হিসাবে পরিচিতি। এর অংশগুলো নিম্নরূপ :

অভিনেত্র (Eye piece) : এটি একটি টানেলের ভিতর বসানো থাকে। উপরের অংশ সমান কিন্তু ভিতরের অংশ উত্তা অর্থাৎ Plano Convex প্রকৃতি অভিনেত্র। এর ফোকাস দূরত্ব বেশি, অ্যাপারচার বড়। অভিনেত্রে একটি চোখ রেখে আণুবীক্ষণিক বস্তু দেখা যায় .

অভিলক্ষ ( Objective) : অভিলক্ষের ফোকাস দূরত্ব কম, অ্যাপারচার ছোট। এটি অভিনেত্রের মত লেন্স সমন্বয়ে গঠিত ছোট নল বা প্যাচ দিয়ে নোজ পিসের ছিদ্রে লাগানো থাকে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দুই বা তিন ধরনের অভিলক্ষ থাকে যেগুলোর বিবর্ধন ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন।

কনডেন্সার : দর্পণে পতিত সমান্তরাল আলোক রশ্মি যার মাধ্যমে অভিসারী হয়ে দর্শনীয় বস্তুসমৃদ্ধ স্লাইডে পতিত হয়। দুটি লেন্সের সমন্বয়ে কনডেন্সার মঞ্চের ছিদ্রের নিচে আটকানো থাকে। Stage-এর নিচে থাকে বলে একে Sub-stage Condenser বলা হয়।

দর্পণ : যে বস্তুর জন্য অণুবীক্ষণ যন্ত্রকে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয় তা হচ্ছে দর্পণ। বস্তুকে দেখার জন্য এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটি Plano Concave ধরনের। এটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের পাদদেশে আটকানো। ঘূর্ণনশীল হওয়ায় একে ইচ্ছামাফিক ঘুরিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আলোক বিসরণ করা যায়।

Follow us On Google News For Latest Updates 

সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র

১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে Antony Von Leeuvan Hook (১৬৩২-১৭২৩) সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এতে একটিমাত্র লেন্স থাকে এবং বীক্ষণ পদ্ধতি সরল বিধায় এই ধরনের যন্ত্রকে সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়। এতে আই পিস লেন্স থাকে কিন্তু অবজেকটিভ থাকে না। এর অন্যান্য অংশগুলো হল ভাঁজযুক্ত বাহু, উল্লম্ব স্তম্ভ, কাচের স্টেজ, স্টেজে ক্রু দিয়ে আটকানো দুটি ক্লিপ, সন্নিবেশ স্ক্রু, হাতলাকার স্তম্ভ, পাদদেশ।

কার্যপ্রণালী : কোনো বস্তুকে সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রায় ১০-৪০ গুণ বড় করে দেখা যায়। ক্ষুদ্র প্রাণী দেখার জন্য এটি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

(১) কাচের মঞ্চে ক্ষুদ্র প্রাণীযুক্ত স্লাইডটি রেখে ক্লিপদ্বয়ের সাহায্যে আটকাতে হবে।

(২) দর্পণটি এমনভাবে নড়াচড়া করে স্থাপন করতে হবে যেন স্লাইডটির উপর আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়।

(৩) আই পিসে এক চোখ রেখে সন্নিবেশক স্ক্রুর সাহায্যে একে উঠানামা করিয়ে ঐ ক্ষুদ্র প্রাণীটির স্পষ্ট প্রতিবিম্ব পরিলক্ষিত হলে স্ক্রু থামিয়ে দৃশ্যমান প্রাণীর অঙ্গসংস্থান বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

গুরুত্ব (ব্যবহার) : ক্ষুদ্র প্রাণী দর্শনে, ক্ষুদ্র প্রাণীর whole mount অথবা প্রাণীর অংশবিশেষ দেখতে এই যন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এটির দ্বারা প্রাণী বা প্রাণী অংশে অঙ্গসংস্থানিক দেখা গেলেও কলাস্থানিক দিক দেখা জটিল ।

অণুবীক্ষণ যন্ত্রের কার্যপ্রণালি বা ব্যবহার পদ্ধতি

  • আলো প্রতিফলনের জন্য সুবিধাজনক উচ্চতায় রাখার জন্য Microscope এর নিচে stand ব্যবহার করতে হয়।
  • দর্পণে সরাসরি সূর্যের আলো প্রতিফলন পদ্ধতি পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • সমতল দর্পণ ব্যবহার করতে হবে। দর্পণ ঘুরিয়ে বস্তুকে দৃশ্যমান করার জন্য স্পষ্ট আলো প্রতিফলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • অভিলক্ষের সাহায্যে বস্তুকে ফোকাস করতে হবে।
  • Condenser উঠানামা করে তীক্ষ্ণভাবে বস্তুকে ফোকাস করতে হবে।
  • পরীক্ষণীয় বন্ধকে স্লাইডে রেখে মঞ্চে স্থাপন করতে হবে।
  • প্রয়োজনে নোজ পিস ঘুরিয়ে বেশি বিবর্ধন ক্ষমতার অভিলক্ষ ব্যবহার করতে হবে।
  • পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • Eye piece-এ চোখ স্থাপন করে স্থুল সন্নিবেশক ও পরে সূক্ষ্ম সন্নিবেশক ঘুরিয়ে পরীক্ষণীয় বস্তুর সুস্পষ্ট দৃশ্য অভিলক্ষ যেন স্লাইডে কভার স্লিপ স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সতর্কতা : অনবধানতামূলক ব্যবহারের ফলে Microscope-এর ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই ইহা ব্যবহারে যেমন দক্ষতার প্রয়োজন তেমনি সতর্কতারও প্রয়োজন।

(১) অণুবীক্ষণ যন্ত্রকে কাজের শেষে Cover screen বা বাক্সে রাখতে হবে।

(২) ধুলাবালি ও আর্দ্রতার হাত থেকে দূরে রাখতে হবে।

(৩) অভিলক্ষ ও অভিনেত্রের লেন্সে ধুলাবালি জমতে দেয়া যাবে না। লেন্স টিস্যু পেপার দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

(8) Microscope স্থানান্তরের সময় শুধু হাতলে ও পাদদেশের নিচে হাত দিয়ে সরাতে হবে।

(৫) এটিতে ধুলাবালি লাগলে প্রথমে ব্রাশ দিয়ে পরে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছতে হবে।

(৬) অনেক সময় আর্দ্রতার কারণে লেগে Mould বা Fungus জন্মায়। এটি দূরীকরণের জন্য Fungicide ব্যবহার করা যায়। অভিনেত্র ও অভিলক্ষকে Mould বা Fungus মুক্ত রাখার জন্য সিলিকাজেলসহ রাখতে হয়।

ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্ৰ (Electron Miroscope)

১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালেলিও কর্তৃক সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও পরে ১৬৬১ সালে লিউয়েন হুক কর্তৃক আরেক ধরনের সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার এবং ১৬৬৫ সালে রবার্ট হুক কর্তৃক জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর Knoll ও Ruska নামক দু'জন জার্মান বিজ্ঞানী Electron অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু বা কণা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে Inventional Hierarchy অতি চমৎকার। আজকালকার বিশ্বে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। বেলজিয়ামের Marton (১৯৩৪) ও কানাডার Probus ও Miller (১৯৩৪)-এর ব্যবহারে সহজ ক্ষেত্র তৈরি, উন্নয়ন সাধন করেন ।

জীবতাত্ত্বিক গবেষণায় কোষের অতি সূক্ষ্ম গঠন, অঙ্গাণুসমূহের গঠন, DNA, Gene, RNA ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের জন্য আলোকরশ্মির পরিবর্তে .005nm nm = 1 x 10") বা 05A (A= 1 x 1010) তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের Electron Beam ব্যবহার করে ইলেক্ট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে আবিষ্কারকগণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url